বাণিজ্য

দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কমেছে অস্থিরতা

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা মজুতের পতনও বন্ধ হয়েছে। নগদ বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যে অস্থিরতা ছিল, সেটি কমেছে। দুই বছর ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকা মার্কিন ডলারের মান না কমলেও নির্দিষ্ট দামে মোটামুটি স্থিতিশীল আছে। ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরো ও মালয়েশীয় রিঙ্গিতের দাম এখন কমতির দিকে। প্রতিবেশী ভারত খুব কম ভিসা দেওয়ায় তাদের মুদ্রা রুপির বিনিময় হার কিছুটা দুর্বল হয়েছে। তবে থাইল্যান্ড ভিসা চালু রাখায় সে দেশের মুদ্রা বাথের চাহিদা ও দাম খানিক বেড়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও খোলাবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বিদেশি মুদ্রার বাজারের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

সাধারণত সরকার পরিবর্তনের পর মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। তবে বাংলাদেশে তেমনটা ঘটেনি। উল্টো দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা অস্থিরতা কমে এসেছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন সরকার এসে সময়োপযোগী নীতি নেওয়ায় এবং অনেক দেশ ভিসা প্রদান সীমিত করায় বিভিন্ন বিদেশি মুদ্রার চাহিদা ও দাম কমে এসেছে। ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা কমছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত ১৪ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে, বিশেষ করে ডলার-সংকট কাটাতে আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করেন। ফলে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় মুদ্রাটির মধ্যবর্তী দাম ১১৭ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে পারছে ব্যাংকগুলো। এর সঙ্গে সম্পর্ক রেখে পরবর্তী দুই মাস ন্যান্য মুদ্রার দামও নির্ধারিত হয়।

ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে নগদে প্রতি মার্কিন ডলারের দাম ছিল ১১৮ টাকা। দুই মাস ধরে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছে জমা ছিল ৫ কোটি ১৪ লাখ নগদ ডলার। অন্যদিকে খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১২৪ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে, যা তিন মাস আগে ১২৩ টাকা ছিল। তবে ব্যাংকগুলোয় এখন ভিসাসহ পাসপোর্ট ও টিকিট নিয়ে গেলে ডলার মিলছে। দেশের বেশির ভাগ নাগরিকই বিদেশে যাওয়ার সময় ডলার নেন। কারণ সব দেশেই ডলারের চাহিদা রয়েছে, এতে বাড়তি দামও পাওয়া যায়।

রাজধানীর মতিঝিলের খোলাবাজারের মুদ্রা বিক্রেতা সজিব মিয়া বলেন, আগের মতো ব্যবসা নাই। ফলে দামেও চাঙাভাব নাই। উল্টো অনেক মুদ্রার দাম কমে আসছে। ফলে লোকসানে পড়তে হচ্ছে।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য তুলনামূলক সহজে ভিসা পাওয়ার পাশাপাশি আকাশ ও সড়কপথে যোগাযোগ থাকায় বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য হচ্ছে ভারত। দেশ থেকে বিদেশে যাওয়া পর্যটকদের ৪০-৪৫ শতাংশই ভারত যান। এরপরই রয়েছে থাইল্যান্ড। চিকিৎসা, শপিং ও ঘোরাঘুরির জন্য ১৫-২০ শতাংশ বাংলাদেশি পর্যটকের গন্তব্য এই দেশ। এর বাইরে বাংলাদেশি পর্যটকদের ১০-১৫ শতাংশ মালয়েশিয়া ও ৫-১০ শতাংশ সিঙ্গাপুর ভ্রমণে যান। সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), সৌদি আরব ও ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ভ্রমণ করতে যান ১০-১৫ শতাংশ বাংলাদেশি পর্যটক। এ ছাড়া দেশের পর্যটকদের ৫-৮ শতাংশ ইউরোপে, ৫-৮ শতাংশ নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও চীন ভ্রমণে যান।

দেশে সরকার পরিবর্তনের পর ভারত শুধু সীমিতভাবে জরুরি চিকিৎসা ভিসা দিচ্ছে। দেশটি পর্যটন ভিসা বন্ধ রেখেছে। ফলে ভারতীয় রুপির চাহিদা কমেছে। ফলে ব্যাংকগুলোয় এখন জুলাই মাসের দামে রুপি মিলছে। তবে খোলাবাজারে রুপির দাম এক মাসে ১৫ পয়সা বেড়ে ১ টাকা ৪৭ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে।

ভিসা কম পাওয়ায় দেশের মানুষের ভারতে যাওয়া কমেছে। যেমন ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস আগে যেখানে সপ্তাহে ৩২টি ফ্লাইট পরিচালনা করত, সেখানে এখন করছে মাত্র ১২টি।

ট্যুর অপারেটররা বলছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ভিসাও পাচ্ছেন না অনেক পর্যটক। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের ভিসা পেতেও দীর্ঘ সময় লাগছে। শুধু জটিলতা ছাড়া শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে যাওয়া যায়। অবশ্য পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণেও অনেক ব্যবসায়ী ও ভ্রমণপিপাসু ভ্রমণ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে দেশি পর্যটকদের বিদেশযাত্রা ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে।

জানা গেছে, থাই বাথের দাম গত জুলাইয়ে ছিল ৩ টাকা ৪০ পয়সা, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে হয় ৩ টাকা ৫০ পয়সা। এখন তা ৩ টাকা ৭০ পয়সায় স্থিতিশীল আছে। খোলাবাজারে দাম আরও ১০ পয়সা বেশি। ইউএইর প্রতি দিরহামের দাম গত সেপ্টেম্বরে ছিল ৩২ টাকা, যা এখন ৫০ পয়সা বেশি। একই সময়ে সৌদি রিয়াল ৩১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা ও মালয়েশিয়ার রিঙ্গিত ২৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ২৮ টাকায় উঠেছে।

এরকম আরও

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button